কোন মানুষ যদি কারো প্রতি কোন হিংসা বিদ্বেষ না রেখেই সকাল করে, অর্থাৎ রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে কারো কোন অপরাধ, দোষ ত্রুটি থাকলে আগাম ক্ষমা করে দিয়ে তারপর ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে সেই ক্ষমাকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ জান্নাত দিবেন।
এই মহৎ গুণের অধিকারী ব্যক্তিকে হাদিসে জান্নাতীও বলা হয়েছে।
মানুষকে ক্ষমা করা যেমন মহৎ একটি গুণ, তদ্রুপ আরো একটি মহৎ গুণ হলো সদাসর্বদা আল্লাহর জিকির আজকারে ব্যস্ত থাকা এমনকি রাতে যতবার ঘুম ভাঙবে, ঘুম ভাঙার সাথে সাথে দু-চার বার ছোট ছোট তাসবীহ তাহলীল পড়ে নেয়া।
রাতে যতবার ঘুম ভাঙবে, তৎক্ষণাৎ আল্লাহু আকবার বা সুবহানাল্লাহ বা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ , আস্তাগফিরুল্লাহ এই তাসবীহ সমুহ পড়া গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ।
আল্লাহর সাথে কার কেমন সম্পর্ক তা নির্ণয় করার জন্য বা আল্লাহর সাথে সুন্দর সম্পর্ক স্থাপনের উত্তম একটি উপায় হলো জিহ্বা বা মুখকে আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত রাখা।
এই তাসবীহ গুলো দিনে রাতে জবানে চালু থাকার অর্থই হল আল্লাহর সাথে তার সম্পর্কটা অত্যন্ত সুন্দর আছে।
কারণ হাদিসে স্পষ্টই বলা হয়েছে: যে আল্লাহর জিকির করে আর যে জিকির করে না তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে জীবিত আর মৃত ব্যক্তির মতো।
অপরপক্ষে কোন মানুষের সাথে যদি কারো কোন প্রকার লেনদেন হিংসা-বিদ্বেষ না থাকে তাহলে এটাও প্রমাণ করে যে মানুষের সাথে তার সম্পর্কটা সুন্দর হবে।
অর্থাৎ তিনি সমাজের হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত একজন ভদ্র মানুষ।
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর হক ও বান্দার হক সম্পর্কে সর্বদা জাগ্রত নিশ্চয়ই তিনি মহৎ গুণের অধিকারী একজন ব্যক্তি।
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অধিকার বাস্তবায়ন করে ,বিধি নিষেধ যথাসাধ্য মান্য করে চলে এবং সেই সাথে সমাজ,মানুষ ও জনগণের অধিকারও খেয়াল রাখে এবং দ্বন্দ্ব-কলহ ঝগড়া-বিবাদ হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখে
এই ব্যক্তিই প্রকৃত ঈমানদার ও মহান ব্যক্তি। এবং এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য “স্বচ্ছ হৃদয়ের অধিকারী”
আর একথাটি আল্লাহ তা’আলা সূরা শু’আরায় বলেছেন:
রোজ হাশরে মানুষের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি কোনোই উপকারে আসবে না ।
বরং স্বচ্ছ হৃদয়ের মালিক; যিনি দুনিয়াতে তার অন্তরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখেছিলেন , এই মহৎ গুণের কারণেই রোজ হাশরে আল্লাহ তাকে নাজাত দিবেন।
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর অধিকার ও জনগণের অধিকার রক্ষা করবে আল্লাহ তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
আর আমরা জানি পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ অন্তরের মালিক একমাত্র তিনিই হতে পারেন যিনি সহজ সরল ,হিংসা বিদ্বেষ ও অহংকার মুক্ত।
মানবীয় এই মহৎ গুণের কোন ব্যক্তি যখন আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করে আর নিজের জিহ্বাকে সদাসর্বদা জিকির-আজকারে ব্যস্ত রাখে তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান যদিও তার অন্যান্য এবাদত-বন্দেগি অত বেশি নাও হয়।
তবে এবাদত বন্দেগিতে যথাসাধ্য করার পাশাপাশি জিকির-আজকার কে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করে
এমন পরিষ্কার অন্তরের মানুষকে আল্লাহ তাআলা অনেক বেশি ভালবাসেন এবং তার সমস্ত গুনাহ গুলো মাফ করে দেন
এবং তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করান।
এমনই একজন সাহাবীর কথা বলবো যিনি উপরোক্ত মহৎ দুটি গুণের অধিকারী ছিলেন:
১- যিনি অত্যন্ত সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন এবং মানুষের দোষ ত্রুটিও আগাম ক্ষমা করে দিতেন।
২- যিনি বিশুদ্ধ ঈমানের সাথে যথাসাধ্য এবাদত বন্দেগীতে থাকতেন এবং জিকির-আজকারে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন।
তিনি অত্যন্ত একজন সাধারন মানুষ ছিলেন, আব্দুল্লাহ নামে যিনি পরিচিত।
এই ব্যক্তি কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে তিন দিন জান্নাতি ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
অথচ আব্দুল্লাহ ইবনে আমর তাঁর এত বড় সুসংবাদ অর্জনের ও এত বড় সফলতার পেছনে উল্লেখযোগ্য কি এমন আমল লুকায়িত আছে তা খোঁজার জন্য তিনি তার বাড়িতেই অবস্থান করলেন তিন তিনটি রাত।
অথচ এই ছোট্ট আব্দুল্লাহ ইবনে আমর তিনি সেই লোকটির মাঝে উল্লেখযোগ্য কোন আমলই দেখতে পেলেন না।
তখন তিনি অবাক হয়ে তাকে সত্য কথাটা খুলেই বললেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর সেই লোকটিকে বললেন:
আসলে আমি আপনার বাড়িতে অবস্থান করেছি আপনার রাতের ইবাদত ও আমল দেখার জন্য । আর যে কথা বলে আমি আপনার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম তা আসলে ততটা বাস্তব ছিল না।
অর্থাৎ বাবার সাথে আমার কোন ঝগড়াও হয় নি আর আমি আমার বাবার বাড়ি পরিত্যাগও করে নি।
আর যে কৌশলে তিনি তার বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন সে কৌশলটি ছিল: তিনি তাঁকে শুনিয়েছেন যে আমি আমার বাবার সাথে দ্বন্দ্ব করে বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছি আমার থাকার জায়গা নেই আমি আপনার বাড়িতে থাকতে চাই।
তখন এই সহজ-সরল লোকটি তার কথা বিশ্বাস করে তাঁর বাড়িতে আশ্রয় দেয়, কিন্তু তিনি জানতেন না যে এই আবদুল্লাহ ইবনে আমর তাঁর রাতের আমল অবলোকন করার জন্যই আত্মগোপন করে তাঁর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
যাই হোক অবশেষে আবদুল্লাহ ইবনে আমর একাধারে তিনরাত্রি তার বাড়িতে অবস্থান করার পরে যখন দেখলেন যে উল্লেখ করার মতো তার তেমন কোন আমলই নেই এবং তিনি কিছু গোপন আমল খুঁজেও পেলেন না।
তখন তিনি আসল পরিচয় প্রকাশ করলেন,
অর্থাৎ সেই সহজ সরল লোকটিকে তিনি খুলে বললেন যে আসলে আমার বাবার সাথে আমার কোন ঝগড়া, দ্বন্দ্ব-কলহ হয়নি তবে আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে তোমাদের মাঝে এখন একজন জান্নাতি ব্যক্তি প্রবেশ করবে আর একথা তিনি একাধারে তিনদিন বললেন এই কথা বলার পরেই একমাত্র তুমিই সেখানে এসে হাজির হয়েছে।
অর্থাৎ তোমাকে লক্ষ্য করেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে তিনদিন বলেছেন যে তোমাদের মাঝে এখন একজন জান্নাতি ব্যক্তি আগমন করবে।
সুতরাং তুমি খুলে বলো যে তোমার কোন আমলটি আল্লাহর কাছে পছন্দ হয়েছে অথচ আমি তোমার উল্লেখযোগ্য কোন আমলে দেখতে পেলাম না।উল্লেখ করার মতো যা দেখেছি তা হল যখনই তোমার ঘুম ভাঙতো তখনই তুমি আল্লাহ জিকির আজকার করতে আবার ঘুমিয়ে যেতে এভাবে যতবার তোমার ঘুম ভাঙতো ততবারই তুমি আল্লাহর জিকির করতে এবং ঘুমিয়ে যেতে এভাবে ফজর পর্যন্ত তুমি ঘুমিয়ে থাকতে এ ছাড়া তোমার আর উল্লেখযোগ্য কি এমন আমল আছে যা আল্লাহর কাছে অতি পছন্দনীয় ছিল?
তখন সেই সহজ সরল ভদ্র লোকটি বললো আসলে আমার তো তেমন কোন আমল নেই তবে আমি যখন ঘুমাই তখন আমি কারো বিষয় মাথায় রাখি না অর্থাৎ কারো প্রতি আমার হিংসা বিদ্বেষ ও থাকে না আমার প্রতি দুর্ব্যবহার ঝগড়া-বিবাদ করলেও অপরাধ করলেও আমি সবাইকে মুসলিম ভাই হিসেবে ক্ষমা করে দেই।
হয়তো মানুষকে ক্ষমা করাটাই আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দ হয়েছে
তখন আব্দুল্লাহ বিন আমর বললেন হ্যাঁ ঠিক হয়তো এই আমলটিই আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় হয়েছে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে উত্তম আমল বেশি বেশি করার তৌফিক দান করুন।